সর্বশেষ সংবাদ
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মঙ্গলবার শুরু হওয়া “রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি” বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের দ্রুত রাখাইনে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে।
প্রফেসর ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের জন্ম মিয়ানমারে, তাই এর সমাধানও সেখানেই নিহিত। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, “রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোই একমাত্র কার্যকর সমাধান। এ ইস্যুকে মিয়ানমারের বৃহত্তর সংস্কারের সঙ্গে জিম্মি করে রাখা যাবে না।”
মঙ্গলবার সকালে (স্থানীয় সময়) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বলেন, গণহত্যা শুরুর আট বছর পরও রোহিঙ্গাদের দুর্দশা অব্যাহত রয়েছে। এ সংকট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ অনুপস্থিত, আন্তর্জাতিক অর্থায়নও মারাত্মক ঘাটতির মুখে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে, এর সমাধানও সেখানেই নিহিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যেন তারা অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে এবং দ্রুত রাখাইনে তাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা শুরু করে। এটিই একমাত্র সমাধান। সংকটের সমাধানকে মিয়ানমারের বৃহত্তর সংস্কারের সঙ্গে জিম্মি করে রাখা উচিত নয়।
প্রধান উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন, আন্তর্জাতিক সহায়তা ভয়াবহভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার ব্যয় বহন অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই শান্তিপূর্ণ বিকল্প হিসেবে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফেরত পাঠানো ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
তিনি জানান, রোহিঙ্গারা নিজেরাও বারবার দেশে ফেরার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘাত এড়াতে যারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তাদের অবিলম্বে ফিরিয়ে নেওয়ার ওপর জোর দেন তিনি।
বক্তব্যে ড. ইউনূস স্পষ্ট করেন যে বাংলাদেশ এ সংকটের শিকার। ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার ফলে আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত চাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। রাখাইনের দিক থেকে মাদক প্রবাহসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলছে।
তিনি আরও বলেন, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের মতো উন্নয়নজনিত চ্যালেঞ্জের কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থান দেওয়া সম্ভব নয়।
সাত দফা প্রস্তাব
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন—
১. রাখাইনে স্থিতিশীলতা এনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের রোডম্যাপ প্রণয়ন।
২. মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করে সহিংসতা বন্ধ করা এবং পুনর্বাসন শুরু।
৩. রাখাইনের স্থিতিশীলতায় আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিত করা ও আন্তর্জাতিক বেসামরিক উপস্থিতি গড়ে তোলা।
৪. রোহিঙ্গাদের সমাজ ও প্রশাসনে টেকসই অন্তর্ভুক্তির জন্য আস্থা গড়ার পদক্ষেপ নেওয়া।
৫. দাতাদের অবদান বাড়িয়ে যৌথ প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনা (Joint Response Plan) সম্পূর্ণ অর্থায়ন করা।
৬. জবাবদিহিতা ও পুনর্বাসনমূলক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।
৭. মাদক অর্থনীতি ভেঙে দেওয়া এবং সীমান্তপারের অপরাধ দমন।
বিশ্বকে একসাথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্যের শেষে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বিশ্ব আর রোহিঙ্গাদের অপেক্ষায় রাখতে পারে না। আজ আমরা প্রতিজ্ঞা করি—এই সংকটের স্থায়ী সমাধানে একসাথে কাজ করব। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।”