সর্বশেষ সংবাদ
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, তারেক রহমানের চোখে থাকবে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। বাবা, মায়ের মতো তিনি দেশ ও জনগণকে বুকে আগলে রাখবেন। দেশ তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, তিনি ছুটে আসছেন ধূমকেতুর মতো নিজ মাতৃভূমিতে। ইনশাল্লাহ বিএনপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে।
তিনি মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে হালুয়াঘাটের জুগলি ইউনিয়ন বিএনপির ত্রিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনে মুহুর্মুহু স্লোগানের মধ্যে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, তারেক রহমানের হাতে তাঁর বাবার মতো জাদুর কাঠি, বুকে অসীম সাহস ও দৃঢ় মনোবল। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া তাঁর মতো ভিশনারি নেতা আর কেউ নাই। তিনি মানুষকে শুধু স্বপ্নই দেখান না, বাস্তবায়নও করার সক্ষমতা তাঁর আছে। স্বপ্নবাজ এই নেতার রয়েছে জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি, যা জাতিকে মুক্তির পথ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, তারেক রহমান শুধু নির্বাচনের জন্যেই নিজে বা দলকে প্রস্তুত করছেন না, নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠনেরও পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছেন, নির্বাচনের পরপরই জনগণের কাছে নির্বাচনপূর্ব অঙ্গীকার বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে নিজে এবং দল ও নেতাকর্মীদেরকেও প্রস্তুত করছেন। দৃঢ়চেতা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এই নেতার কাছেই বাংলাদেশ ও জনগণ নিরাপদ। তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি পুরুষ ও মহিলাদের ছোট ছোট টিম করে ঘরে ঘরে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত নির্বাচন জনগণের দরজায় কড়া নাড়ছে। এবার আমাদের সাড়া দেবার পালা। ঘরে ঘরে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের সালাম দিয়ে ও ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে হবে। একই সাথে ভোটে বিজয়ী হবার পর তারেক রহমানের ৩১ দফাসহ দেশ ও জনকল্যাণে বিএনপির কর্মসূচিও ঘরে ঘরে প্রচার করতে হবে।
বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ইনশাল্লাহ তারেক রহমানের জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় চির অবহেলিত, অপার সম্ভাবনায় ভরপুর গারো পাহাড় ঘেঁষা হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়াকে আলোকিত জনপদে পরিণত করা হবে। এই বিরান জনপদে মিল কলকারখানা গড়ে তুলে কর্মমুখর জনপদে পরিণত করা হবে। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়ার অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, এখন রাস্তা ঘটের বেহাল দশা নিজ চোখেই দেখছি। যেখানেই যাই রাস্তা ঘটের দাবি আর দাবি।
আওয়ামী আমলে উন্নয়নের বয়ান শুনতে শুনতে কান ডালপালা হয়ে যেতো উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এগুলো চরম মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই ছিলো না, তারা উন্নয়ন প্রকল্প এনে জনগণের অর্থ তছরুপ করেছে, অবৈধভাবে সম্পদ গড়েছে, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তে নিজেদের ভাগ্য গড়েছে। এসব করে ও নির্মম দমন নিপীড়ন গুলি করেও তারা ক্ষমতায় টিকতে পরে নাই। তাসের ঘরের মত গণভবণ ভেঙে গেছে। তিনি নেতাকর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগের পরিণতির কথা উল্লেখ করে বলেন, “হেডমগিরী দেখিয়ে, দুর্নীতি, লুটপাট করে ক্ষমতায় থাকা যায় না।” তিনি তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল প্রকার বিচার, সালিশ, অনাচার, অবিচার, অপকর্ম থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিনয়ী হয়ে জনগণের সাথে থেকে, জনগণকে সঙ্গে রেখে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল। তারেক রহমানের পরামর্শে গণতান্ত্রিক উপায়ে তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন হচ্ছে। তিনি বলেন, ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাটের ইতিহাসে এইবারই প্রথম গোপন ব্যালটে তৃণমূলে নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়ায় সকলকে ধন্যবাদ জানান।
জুগলি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনের শুরুতেই জাতীয় সংগীতের সাথে সম্মেলনের প্রধান অতিথি এমরান সালেহ প্রিন্স জাতীয় পতাকা ও দলীয় সংগীতের সাথে সম্মেলনের উদ্বোধক আসলাম মিয়া বাবুল ও নয় ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ১০টি দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর অতিথিগণ শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে দেন।
শোক প্রস্তাব পাঠ করেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হাসনাত বদরুল কবীর। প্রয়াত নেতাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
জুগলি ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ক্বারী আবুল কাশেম এর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুস সাত্তার এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবু হাসনাত বদরুল কবীর, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরফান আলী, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল উপলক্ষ্যে ইতঃপূর্বে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুলকে প্রধান করে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরফান আলী ও সদস্য সচিব আবু হাসনাত বদরুল কবিরের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ৭ অক্টোবর কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করে ২৩ সেপ্টেম্বর ভোটার তালিকা প্রকাশ, ২৪ সেপ্টেম্বর চূড়ান্তকরণ, ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র জমা, ২৯ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই, ৩০ সেপ্টেম্বর ও ১ অক্টোবর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১ অক্টোবর প্রতীক বরাদ্দ, ২ থেকে ৬ অক্টোবর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারণার তফশিল ঘোষণা করে।
তফশিল অনুযায়ী সভাপতি পদে ২ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ২ জন ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ২ জন নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। বাছাইয়ে কারোর মনোনয়ন পত্র বাতিল না হওয়ায় এবং কেউ প্রত্যাহার না করায় সভাপতি পদে ক্বারী আবুল কাশেম “চেয়ার“ প্রতীক এবং আবদুল জলিল “ছাতা“ প্রতীক, সাধারণ সম্পাদক পদে আব্দুস সাত্তার “চশমা” প্রতীক, মুকতাদির “মাছ” প্রতীক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সবুজ মিয়া “ফুটবল” প্রতীক ও নিজামুদ্দিন “কলসী” প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আচরন বিধি মেনে সেপ্টেম্বর থেকে ২ থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ভোটারদের কাছে গিয়ে নিজ নিজ পদের জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আচরণ বিধি অনুযায়ী পোস্টার, ভোটারদের আপ্যায়ন, উপঢৌকন প্রদান ও সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ।
বেলা ২ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলছিলো (৩.৩৪মি.)।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে ৫ টি বুথে বেলা ২ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত নির্ধারিত ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যগন সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট প্রদান করেন। বিএনপির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৫১ সদস্যের ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যগণ ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলার। সেমতে ৯ টি ওয়ার্ডের ৪৫৯ জন ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলার।
নির্বাচন কমিশন জুগলি ইউনিয়ন ব্যতীত উপজেলা বিএনপির অন্যান্য যুগ্ম আহ্বায়ক ও অন্যান্য ইউনিয়ন থেকে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং এবং পুলিং অফিসার হিসেবে ভোট গ্রহণ করছেন। প্রার্থীরা প্রতিটি বুথে নিজেদের এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে ভোট পর্যবেক্ষণ ও ভোটারদের পরিচিতি নিশ্চিতসহ ভোট গ্রহণ কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে ৫০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক টিম সম্মেলন ও কাউন্সিলের সার্বিক দিক পরিচালনায় সহযোগিতা করেন।
ভোটাররা গোপন কক্ষে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। তারা দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচনে হালুয়াঘাটের ইতিহাসে প্রথম ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত। তারা বলছেন, ভোটের আগে ভোট হচ্ছে, কেউবা বলছেন, ১৭ বছর পর লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে পেরে তারা আনন্দিত। এই সুযোগ করে দেয়ার জন্য তারা তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
এমরান সালেহ প্রিন্সসহ নেতৃবৃন্দ ভোটকক্ষ পরিদর্শন করেন এবং শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে ভোট হচ্ছে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও মঙ্গলবার বিকেলে তিনি হালুয়াঘাট অগ্রযাত্রা কনভেনশন সেন্টারে উপজেলা মহিলা দলের ওয়ার্ড ভিত্তি প্রতিনিধি সভায় যোগ দিয়ে ঘরে ঘরে ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রচারণা শুরু করার আহ্বান জানান।