সর্বশেষ সংবাদ
প্রায় ১৭ বছর পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি। এক ইন্টারভিউতেই বাজিমাত। ঠিক যেন এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। সম্প্রতি বিবিসি বাংলায় দেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার বৃহত্তর ময়মনসিংহের মানুষের কাছে যেন এক বিমুগ্ধ বিস্ময়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অবারিত দাপটে এখন গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শহরের ফুটপাত, অফিস-আদালত ও ব্যাংক-বীমা সবখানেই আলোচনার মূল বিষয়বস্তু বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘিরে তাঁর নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তা-চেতনার সার কথা। কার্যত আলোয় ঝলমল করে উঠেছে এক নতুন সম্ভাবনা। উচ্ছ্বাসের আতিশয্যে উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত গ্রাম, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা, নগর ও জেলার দলটির নেতা-কর্মীরা।
ADVERTISEMENT
একজন পরিণত, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতার রাষ্ট্রনায়কোচিত অনুপ্রেরণাদায়ক ও আবেগঘন সব উচ্চারণ তৃণমূলের দলীয় নেতাকর্মীদের করেছে আন্দোলিত। আর সাধারণ মুদি দোকানি থেকে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের কাছেও তিনি যেন এক 'নতুন' তারেক রহমান। পুরো বক্তব্যজুড়ে কোথাও প্রতিপক্ষকে আক্রমণ নেই, প্রতিহিংসা নেই। একেবারে সাধারণ মানুষের মতো ভদ্রোচিত ভাষায় কথা বলেছেন। আত্মম্ভরিতা বা অহংকার যেখানে ছিল পুরোপুরি অনুপস্থিত।
গত দু'দিন ময়মনসিংহের পথে-প্রান্তরে ঘুরে স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে আলাপকালে সবাই তারেক রহমানের বক্তব্যের মুন্সীয়ানার বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন। সুদীর্ঘ কথোপকথনে সরল-জটিল সব প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েও পুরোমাত্রায় সপ্রতিভ ছিলেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) সোনালী দলের সাবেক সভাপতি ও জিয়া পরিষদের বর্তমান সভাপতি প্রফেসর ড.মো.আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, 'তারেক রহমান রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞায় স্বচ্ছন্দে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। উত্তরে ছিল না কোনো অস্পষ্টতা। নিজে যেটি বিশ্বাস করেন সেটিই নির্দ্বিধায় বলেছেন। চিরায়ত রাজনীতির ধারায় পাশ কাটিয়ে যাননি কোন প্রশ্নের। বলিষ্ঠ আত্মবিশ্বাসী অবস্থান থেকেই কথা বলেছেন, দেশের মানুষের হৃদয় জয় করেছেন।'
নিজের দেশে ফেরা নিয়েও সোজাসাপ্টা কথা বলেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান। এই প্রসঙ্গে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, 'তারেক রহমানের চোখে থাকবে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। বাবা, মায়ের মতো তিনি দেশ ও জনগণকে বুকে আগলে রাখবেন। দেশ তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, তিনি ছুটে আসছেন ধূমকেতুর মতো নিজ মাতৃভূমিতে। ইনশাল্লাহ বিএনপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করবে।'
সাক্ষাতকারে তারেক রহমানের 'বাংলাদেশ ফার্স্ট' কনসেপ্ট নজরে এসেছে নগরীর বড় বাজার এলাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের তরুণ কর্মী মোক্তাদির আহমেদ'র। এই বিষয়টি আলোকপাত করে তিনি বলেন, ভিশনারি রাজনীতিক তারেক রহমানের 'বাংলাদেশ ফার্স্ট' দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে প্রতীয়মান উন্নয়ন শুধুমাত্র অবকাঠামো বা সংখ্যায় নয়। এটি মানুষের জীবনমান, ন্যায়, সততা ও পরিবেশের ভারসাম্যের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। জামালপুরের বকশীগঞ্জের দোকানি আব্দুস শহীদের মধ্যেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে তারেক রহমানের এই সাক্ষাতকার। তার ভাষ্য ছিল এমন-'আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি একজন স্টেটসম্যানের মতো কথা বলেছেন।'
বৃহত্তর ময়মনসিংহে বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের ভাষ্যে নতুন প্রেরণা, আত্মবিশ্বাস ও সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পেয়েছেন। তারা বলছেন,
তারেক রহমান বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর মা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। স্বভাবতই বিরোধী অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন তিনি প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে দেশের জনগণকে তুচ্ছ বা অবজ্ঞা করে কোন না কোন কথা বলবেন। কিন্তু স্বভাবতই তিনিই প্রথম কোন ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী যিনি জনগণকে এ তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এটিও দেশ-বিদেশে কুড়িয়েছে সুনাম। দেখা হচ্ছে সাক্ষাৎকারের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন হিসেবে।
কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের মনোনয়ন বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মন্তব্য শুধু একটি কৌশলগত ঘোষণা নয়-এটি বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতির সংস্কারধারায় এক সম্ভাব্য নতুন অধ্যায়ের সূচনা। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, মনোনয়নের মূল মাপকাঠি হবে এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রার্থীর যোগসূত্র ও গ্রহণযোগ্যতা। এই দৃষ্টিভঙ্গি যদি বাস্তবে রূপ পায়, তবে এটি হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির সংস্কারের এক কার্যকর সূচনা-যেখানে দলীয় পরিচয় নয়, জনগণের আস্থা হবে প্রার্থীতার ভিত্তি।
শেরপুর বিএনপির অনেকেই বলছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাননি তারেক রহমান। এটি তাঁর উদারতার দৃষ্টান্ত। এই বিষয়ে সবিনয়ে যথার্থই বলেছেন, ‘এখানে মাস্টারমাইন্ড কোনো ব্যক্তি বা দল নয়। দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণই গণঅভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড। এ উপলব্ধি সর্বজনীন হলে আমরা জাতীয় ঐক্যের অনেক কাছাকাছি পৌঁছাতে পারতাম।’
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ময়মনসিংহের দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, প্রায় দেড় যুগ পর দেশের কাণ্ডারি তারেক রহমানের বক্তব্য দেশের মানুষের হৃদয়-মস্তিষ্ককে নাড়িয়ে দিয়েছে। দেশ ছাপিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছেন আমাদের প্রিয় নেতার একটি শোভন সাক্ষাৎকার। যেখানে প্রচলিত রাজনৈতিক কদর্যতা নেই। কাউকে চরিত্রহনন বা অশ্লীল আক্রমণ নেই। যেখানে তিনি স্থাপন করেছেন উদারতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি ও কারা নির্যাতত ছাত্র নেতা শাহ মোহাম্মদ শাহাবুল আলম বলেন, ‘আমাদের ভাবী প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমানের বক্তব্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সবাই স্পষ্ট বার্তা পেয়েছেন। তিনি রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞায় সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। আগামীতে কীভাবে দেশ ও সরকার পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছে দেশের মানুষ।’