সর্বশেষ সংবাদ
মো.শামসুল আলম খান
যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরে মাকে বিদায় জানানোর শেষ মুহুর্ত। রাজনীতির ফিনিক্স পাখি মা বেগম খালেদা জিয়াকে হাসিমুখেই বিদায় জানাচ্ছিলেন জ্যেষ্ঠ সন্তান দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিদায়ের মুহূর্তে মা-ছেলের মধ্যে সংক্ষিপ্ত কথোপকথন হয়। খালেদা জিয়া সন্তানকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কতক্ষণ থাকবে এখানে?’ জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘তুমি উঠে গেলে, জাইমা এলে চলে যাবো।’ এরপর মায়ের হুইল চেয়ারের কাছে এসে জড়িয়ে ধরেন তাকে। বিদায়বেলায় ছেলেকে গালে আদর করেন মা।
বিমানবন্দরটিতে তখন আবেগঘন এক পরিবেশ। এ যেন অন্যরকম এক স্পর্শ। মুখে হাসি থাকলেও ভেতরে ছেলে তারেক রহমানকে বিদায় জানানোর কষ্ট-শূন্যতা। মা আর সন্তানের এমন কথোপকথন আনন্দকাব্য হয়েই হৃদয় ছুঁয়েছে গোটা দেশবাসীকে। হুইলচেয়ারে বসে নাতি জাইমাকে বাবার দিকে খেয়াল রাখার বার্তা দিয়ে কাতারের আমিরের দেওয়া একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
মা-ছেলের আবেগঘন এই মুহুর্তের মধ্যেই দায়িত্বশীল ও কর্তব্যপরায়ণ রাজনীতিক তারেক রহমান একে একে বিদায় জানান খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফেরা অন্যান্যদেরও। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে বুকে টেনে নেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসার মধুরতম অনুভূতির এই শর্ট ভিডিও। এ সময় তারেক রহমান তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘জাহিদ সাহেব, ভালো থাকবেন।’ উত্তরে বিনয়াবনত কণ্ঠে দোয়া চেয়ে তারেক রহমানকে বিদায় জানান তিনিও।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জীবন্ত কিংবদিন্ত এবং হার না মানা এক রাজনীতিক বেগম খালেদা জিয়া। নীতির প্রশ্নে কখনও আপোস করেননি। রাজনীতির আগুন তাকে কখনও কারাবন্দি বা গৃহবন্দি করলেও তিনি কখনও বিক্রি হননি। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বারবার প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। কিন্তু মাথা নত করেননি। আর তাই তো দেশের মানুষের কাছে তাঁর নাম উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধা-আবেগ ও সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে। স্বৈরাচারি ও ফ্যাসিস্ট শাসকরা বারবার তাঁর রাজনীতি শেষ করতে চেয়েছে।
বিশেষ করে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে নির্যাতন-নিপীড়ন ও কারাগারে নিষ্ঠুর বন্দি জীবনে পাননি ন্যূনতম সুচিকিৎসা। এক রকম বিনা চিকিৎসায় তাঁর শরীরে বাসা বাধে হৃদরোগ, লিভার, ফুসফুস, কিডনি, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানান শারীরিক জটিলতা। পুরো ঘটনাপ্রবাহে নি:শব্দে বিশ্বস্ত ছায়াসঙ্গী হিসেবে ছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা.জাহিদ। বহু বাধার বিন্দাচল, চড়াই-উত্রাই, অনিশ্চয়তা, শোকগাঁথা-বেদনা-বিষাদ-আনন্দের বহু দগদগে দিনলিপির স্বাক্ষী তৃণমূল রাজনীতি থেকে ওঠে আসা এই জাতীয় নেতা এবং চিকিৎসক। নিজের মেধা, মনন, প্রজ্ঞা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা আর একাগ্রতায় সেবা দিয়েই জয় করেছেন মা-ছেলের হৃদয়। যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম জিয়ার সফরসঙ্গী ছিলেন তিনিও। মায়ের সেবায় বিলিয়ে দেওয়া একজন চিকিৎসক ও রাজনীতিককে ‘শুভ কামনা’ জানানোর মাধ্যমে প্রকারান্তরে নিজের প্রগাঢ় আস্থা-বিশ্বাস ও দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তারেক রহমান।
খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তনে উদ্বেলিত আবেগ-আনন্দের ঝর্ণাধরা বহমান দেশের প্রতিটি প্রান্তরে। প্রতিটি অনুক্ষন এই দিনটির জন্যই যেন প্রহর গুনেছেন দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ। স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা.এ জেড এম জাহিদ হোসেনও। মঙ্গলবার (৬ মে) বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরার পর গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালেও তাঁর হাস্যোজ্জ্বল মুখ নজর কেড়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সহসাই দেশে ফিরবেন বলে সুসংবাদ দিয়েছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. জাহিদ বলেন, জুবাইদা রহমান আজ এসেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। ব্যারিস্টার জায়মা রহমান যুক্তরাষ্ট্রে একটা রাজনৈতিক প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন। সেই দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই মাঠে এসে, যে নেতৃত্ব তিনি যুক্তরাজ্যে বসে দিচ্ছেন, সেই নেতৃত্ব-অর্থাৎ শুধু বিএনপির নয়, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার নেতৃত্ব দেখবেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো বা সেই পরিবেশ হবে এবং তিনি আসবেন।’
ডা.জাহিদ আরও বলেন, ‘কিছুদিন পর ডা. জুবাইদা রহমান আবারও লন্ডনে যাবেন এবং সহসাই তারেক রহমানসহ দেশে ফিরে আসবেন। লন্ডনে যাওয়ার পর থেকে তারেক রহমান তার মায়ের চিকিৎসার জন্য যা করেছেন, সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। পাশাপাশি চেয়ারপারসনের মানসিকভাবে প্রশান্তি আনতে কাজ করেছেন তার তিন নাতনি। আমরা তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ। লন্ডনে বিএনপির নেতাকর্মী, অন্যান্য দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে অনেকেই দোয়া করেছেন-তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। চেয়ারপারসনও সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’
কাতারের আমিরকে দলীয় চেয়ারপারসনের আন্তরিক ধন্যবাদের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাতার সরকার শুধু এয়ার অ্যাম্বুলেন্সই প্রদান করেনি বরং বিমানের খরচ, ওষুধ এবং চিকিৎসা সেবার সবকিছু নিশ্চিত করেছে। এই সহায়তার জন্য খালেদা জিয়া কাতার সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’ ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, কাতার সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সবকিছু নিশ্চিত করেছে এবং এই মানবিক সহায়তা দেশনেত্রীর সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।