সর্বশেষ সংবাদ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল ঘোষণা করেছেন যে, কয়েক দশকের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশীদের মধ্যে চার দিনের সবচেয়ে ব্যাপক যুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ‘সাধারণ জ্ঞান এবং দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তা’ ব্যবহারের জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে অভিনন্দন জানিয়ে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতব্যাপী আলোচনার পর, আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে’।
ভারতীয় ও পাকিস্তানি কর্মকর্তারা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেছেন, যদিও তাৎক্ষণিকভাবে কেউই আমেরিকান ভূমিকার কথা উল্লেখ করেননি। চার দিন আগে শুরু হওয়া সংঘর্ষ গতকাল সকালের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের বিমান ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পরিণত হয়েছিল। ভারত ও পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত বেশ কয়েকটি দেশ, যার মধ্যে সউদী আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও রয়েছে, এ সংঘাত নিরসনের জন্য কয়েকদিন ধরে কাজ করে আসছিল।
পররাষ্ট্র দফতরের ফোনালাপের বিবরণ অনুসারে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গতকাল সকালে ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে কথা বলেছেন, উভয় পক্ষকে সংকট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করার এবং ‘ভুল হিসাব এড়ানো’র আহ্বান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার রুবিওর সাথে তার ফোনালাপকে ‘অত্যন্ত আশ্বস্তকারী’ বলে বর্ণনা করেছেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন।
এদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, তার দেশ তাৎক্ষণিকভাবে ভারতের সাথে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। দার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সউদী আরবসহ বেশ কয়েকটি দেশের সাথে আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন যারা এ সংকটের কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তিনি শনিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে তার কথোপকথনকে ‘অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক’ বলে বর্ণনা করেছেন। ওদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্রি নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, দু’দেশের সামরিক বাহিনীর মহাপরিচালকরা আজ বিকেলে কথা বলেছেন এবং স্থল, আকাশ এবং সমুদ্র থেকে সব ধরনের গুলিবর্ষণ বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, মহাপরিচালকরা সোমবার আবার কথা বলবেন, পরামর্শ দেবেন যে, ব্যবস্থাটি হতে পারে অস্থায়ী এবং পুনর্মূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এর আগে, ভারতের ক্রমাগত উস্কানির সরাসরি জবাবে ‘অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুস’ নামে একটি বৃহৎ পরিসরে সামরিক অভিযান চালায় পাকিস্তান। উধমপুর বিমান ঘাঁটি এবং পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে ব্যাপক আঘাত হানে। ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানের চালানো এই হামলায়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ভা-ার, দুইটি বিমান ঘাঁটি, একটি ব্রিগেড সদর দপ্তর এবং উরিতে সরবরাহ ডিপো ধ্বংস করার দাবি করেছে পাকিস্তান। একই সাথে সাইবার হামলা চালিয়ে পাকিস্তান ভারতের ৭০ শতাংশ পাওয়ার গ্রিড অকার্যকর করে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
নিরাপত্তা সূত্র জিও নিউজকে জানিয়েছে, অভিযানের অংশ হিসেবে ভারত জুড়ে একাধিক কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুতে অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিয়াসে অবস্থিত একটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভা-ার সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, অপারেশন বুনিয়ানুম মারসুসের অধীনে ধারাবাহিক হামলায় পাকিস্তান একাধিক উচ্চ-মূল্যবান ভারতীয় সামরিক সম্পদ ধ্বংস করেছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, বিয়াসে একটি ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ভা-ার সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। এছাড়াও ভারতের প্রধান অপারেশনাল সাইট উধমপুর বিমান ঘাঁটি এবং পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে ব্যাপক আঘাত হেনেছে। নিরাপত্তা সূত্র জানায়, পাকিস্তান প্রতিশোধমূলক সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে ভারতের উধমপুর বিমান ঘাঁটিতে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ছিল দেশীয়ভাবে তৈরি ফাতেহ-১।
পাকিস্তান উপযুক্ত জবাব দিয়েছে : পাল্টা হামলার মাধ্যমে ভারতকে উপযুক্ত জবাব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। দেশটির রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি, পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর এবং অন্যান্য দলের নেতাদের সাথে টেলিফোনে কথোপকথনের সময় শাহবাজ শরিফ এই মতামত প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শরিফ বলেন, ‘ভারত পাকিস্তানের উপর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে, কিন্তু এই আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ সত্ত্বেও, পাকিস্তান চরম সংযম দেখিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ভারতকে আজ আমরা উপযুক্ত জবাব দিয়েছি এবং নিরীহ প্রাণের রক্তের বদলা নিয়েছি। আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনী বারবার ভারতীয় আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পাল্টা অভিযান ‘বানিয়ান মারসুস’ এ সেইসব ভারতীয় সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হয়েছে যেখান থেকে পাকিস্তানের উপর আক্রমণ শুরু হয়েছিল’।
ভারতের যেসব স্থাপণা ধ্বংস : পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা সূত্রের তথ্য অনুসারে, ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’-এ যেসব লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে বলে জানা গেছে, তার তালিকা নিচে দেয়া হল।
ভারতের পাওয়ার গ্রিড Ñ সাইবার আক্রমণে ৭০ শতাংশ অকার্যকর। আদমপুরে পিএএফের জেএফ-১৭ এর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা ভারতের এস-৪০০ সিস্টেম ধ্বংস করা হয়েছে। অধিকৃত কাশ্মীরের রাজৌরিতে ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যা পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনার জন্য দায়ী। ‘কেজি টপ’ ব্রিগেড সদর দপ্তর, উরি ফিল্ড সাপ্লাই ডিপো, আদমপুর, উধমপুর, পাঠানকোট, সুরতগড়, সিরসা, ভাটিন্ডা এবং হালওয়ারা বিমানঘাঁটি, সেইসাথে আখনুর বিমান ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্থ। অধিকৃত কাশ্মীরের মানকোটের দেহরাঙ্গিয়ারিতে আর্টিলারি বন্দুক অবস্থান, বিয়াসে ব্রহ্মোস স্টোরেজ সাইট, ফুকলিয়ান সেক্টরে ঠিক বিপরীতে ভারতীয় পোস্ট, এলওসি জুড়ে রাবতানওয়ালি পোস্ট, জাজিরা পোস্ট কমপ্লেক্স, কাফির মেহরি, শাহপার ৩ এবং গদর টপ ধ্বংস। সূত্র: বিবিসি, ডন নিউজ, রেডিও পাকিস্তান।
আকাশসীমা খুলে দিল পাকিস্তান
ভারতের সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে পাকিস্তান। গতকাল শনিবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ’-এ দেওয়া এক পোস্টে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। পরে পৃথকভাবে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই বিষয়টি নিশ্চিত করে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা থেকে যুদ্ধবিরতিটি কার্যকর হয়েছে। এর অল্প সময় পরই পাকিস্তানের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি) ঘোষণা দেয়, সব ধরনের ফ্লাইট চলাচলের জন্য তাদের আকাশসীমা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত ৭ মে আজাদ কাশ্মির ও পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতীয় যুদ্ধবিমান লক্ষ্য করে হামলা চালায় এবং পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করে। এরপর থেকেই সীমান্তজুড়ে গোলাগুলি ও ড্রোন হামলার মাধ্যমে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
গত শুক্রবার মধ্যরাতে ভারত পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা চালালে উত্তেজনা চূড়ান্তে পৌঁছায়। পরদিন সকালে পাকিস্তান ভারতের বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি ও স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালায়। এতে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথাও জানিয়েছে ইসলামাবাদ।
যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, আমরা সবসময় দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সহযোগিতামূলক পরিবেশ চেয়েছি। তবে আমাদের সার্বভৌমত্ব ও ভূখ- নিয়ে কখনও আপস করিনি, করবও না।
অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, শনিবার দুপুরে দুই দেশের সামরিক অপারেশনের মহাপরিচালকদের (ডিজিএমও) মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হয়। আলোচনার পর তারা সম্মত হন-স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ থাকবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১২ মে আবারও দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, দুই পরমাণু শক্তিধর দেশ এখন যুদ্ধ নয়, শান্তির পথে হাঁটতে রাজি হয়েছে। এটা এই অঞ্চলের জন্য বড় সুখবর।