সর্বশেষ সংবাদ
ময়মনসিংহ নগরে ফয়সাল খান ওরফে শুভ (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানের পর বাসার সামনে থেকে ওই যুবককে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে তিনি মারা যান। তবে মৃত্যুর ৭২ ঘন্টা অতিক্রম করলেও এর রহস্যের জট এখনো খুলেনি,মূল ঘটনাকে নাটকীয়ভাবে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে নিহত যুবকের পরিবারের মাঝে নানান কানাঘোষা চলছে। তারা বলছেন, এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় ১২ নভেম্বর নগরের কোতোয়ালি মডেল থানায় নিহত ফয়সালের বাবা মো. সেলিম খান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসায় ঢুকে হত্যার উদ্দেশে মারধর করে ফয়সালকে বাসার নিচে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেন। মামলায় মেয়েটির বাবাসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয় বলে জানান কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এ নিয়ে তদন্ত চলমান।
নিহত ফয়সাল খান ওরফে শুভ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা কাশিপুর এলাকার মো. সেলিম খানের ছেলে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ শেষ করে নগরের কেওয়াটখালী পাওয়ার হাউস রোডে বড় বোনের বাসায় থেকে চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন।
স্বজনরা জানান, চার বছর ধরে ফয়সালের সঙ্গে একই এলাকার এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি মেয়েটির সরকারি চাকরি হয়। এরপর অন্য আরেকজনের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হলে ফয়সালের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ফয়সাল বিয়েতে বাধা দিতে চাইলে মেয়েটির বাবা ১০ নভেম্বর পর্নোগ্রাফি আইনে থানা ও ডিবি পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ করেন। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। পরে বোনের বাসার সামনে থেকে ফয়সালকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
ময়মনসিংহ ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তরুণীর বাবা ঈশ্বরগঞ্জ থানা ও ডিবির কাছে পর্নোগ্রাফি আইনে অভিযোগ করেন। ১০ নভেম্বর রাতে তারা ময়মনসিংহ শহরে ফয়সালের বোনের বাসায় অভিযানে যান। তাদের সঙ্গে অভিযোগকারী ব্যক্তিদের দুজন ছিলেন। তখন তাকে (ফয়সালকে) সেখানে না পেয়ে তারা চলে আসেন। পরদিন আহত হওয়ার খবর পান।
তবে ফয়সালের ভগ্নিপতি মোহসিনুল হক বলেন, বাসার দোতলায় পুলিশ যখন তার সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন মেয়ের পরিবারের তিনজনকেও দেখেন। তাদের মধ্যে দুজন সরাসরি পাঁচতলায় চলে যান। ফয়সাল তখন পাঁচতলায় ছিলেন। পুলিশ ওপরে উঠতে চাইলে ওপর থেকে নামতে থাকা দুজন বলেন, ফয়সাল নেই। পরে পুলিশ চলে যাওয়ার পর বাসার নিচে ফয়সালকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে তিনি দাবি করেন।
ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাত ৯টার দিকে ফয়সালের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। রাত ১১টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এ সময় স্বজনেরা ফয়সালকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বিচার চান।
এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগের ব্যাপারে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি ওবায়দুর রহমান জানান, ১০ নভেম্বর মেয়েটির পরিবার থেকে অভিযোগ পেয়ে দিবাগত রাত ১২টার পর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে। কিন্তু ছেলেটি ময়মনসিংহে থাকায় ডিবির কাছেও মেয়েটির পরিবার অভিযোগ দিয়েছিল। ডিবি গিয়ে খুঁজে পায়নি। কিন্তু পরদিন খবর পাওয়া যায়, বাসার নিচে পড়ে ছিল। বাসার নিচে কীভাবে পড়ল, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা আছে।
তবে এ ঘটনার জট খুলতে শুরু করছে, অচিরেই মূল হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে পর্যবেক্ষণ মহল মনে করে